রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণের হার ওঠানামা করলেও মৃত্যু থামছে না। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত চলতি মাসের ২৫ দিনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট ২৭৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুহার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৭, মার্চে ৩১, এপ্রিলে ৭৯ ও মে মাসে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতালে কমছে না করোনা ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর চাপ। প্রতিদিন শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যে সব রোগী আসছেন, তাদের অক্সিজেন লেভেল ৯০ এর নিচে নামলেই শুধু ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে শুধু তাদের ভর্তি করা হচ্ছে। বাকিদের ব্যবস্থাপনাপত্র দিয়ে বাড়ি থেকেই চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪২৩ জন। এদের সবাইকে দিতে হচ্ছে অক্সিজেন সাপোর্ট।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, করোনা ইউনিটের রোগিদের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৮ হাজার লিটার অক্সিজেন লাগছে। এখন রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করাটাই আমাদের কাছে একটি চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অক্সিজেন সরবরাহ আরও নিরবচ্ছিন্ন রাখতে আরেকটি অক্সিজেন ‘ভ্যাপোরাইজার’ লাইন লাগানো হয়েছে।

তিনি বলেন, তাদের অক্সিজেনের জন্য বাড়তি প্রস্তুতি রাখা হয়েছে; যাতে রোগী বেশি হলেও ব্যবস্থা করা যায়। হয়েছে। আমাদের ১৮৩টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রয়েছে। বর্তমানে ৭২৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ রাখা হয়েছে। একটি রোগীর অনেক অক্সিজেন লাগছে। এ জন্য অনেক সিলিন্ডার দরকার হচ্ছে। আরও ২০০ সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শামীম ইয়াজদানী বলেন, ২০টি আইসিইউ বেড রয়েছে ও ৬৯টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা রয়েছে, যা প্রায় আইসিইউর সমতুল্য। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২০টি আইসিইউ বেডের বিপরিতে আবেদন ছিল ৯০ জনের। ফলে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য এগুলো আরও বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রতিদিন তিনটি ট্রাক হাসপাতালে তরল অক্সিজেন সরবরাহের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এই তরল অক্সিজেন ভ্যাপোরাইজার দিয়ে বাষ্পীভূত করা হচ্ছে। তা পাইপের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে চলে যাচ্ছ। ওয়ার্ডের রোগীর শয্যার পাশে অক্সিজেন পোর্ট তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে রোগীদের অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এত দিন একটি ভ্যাপোরাইজারের মাধ্যমে তরল অক্সিজেন বাষ্পীভূত করে পাইপে ঢোকানো হচ্ছিল। কোনো কারণে লাইনে ত্রুটি হলে দু-এক মিনিটের মধ্যে বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। এ জন্য চলমান লাইনটা বন্ধ না করে বাইপাস করে গত বুধবার আরেকটি নতুন ভ্যাপোরাইজার লাগানো হয়েছে। কিন্তু এর বেশি রোগী এলে তা আবার এই অবস্থা দিয়ে মোকাবিলা করা যাবে না।